আজকের কথাগুলো একটু অন্যরকম।
সবসময় বন্ধ দরজার পেছনের মেয়ে হিসেবে চলে আসা আমি কিভাবে যে দরজা খুলে বের হলাম জীবনের মুখোমুখি হতে,নিজেও জানিনা।
কখন যে এই প্ল্যাটফর্মে কথা বলতে বলতে কষ্টটাকে অনেকাংশে সরিয়ে দিতে পেরেছি,জানিনা।এতটাই যে আজকে আর আগের মতন নিজেকে বাতিল মনে হচ্ছেনা।
আজকে আর আগের মতন তারিখগুলো মুছে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
আজ তাই ভালো কিছু লিখতে বড্ড ইচ্ছে হলো।
আজ তাই বলতে এলাম,অসংখ্য অপ্রাপ্তির মধ্যেও পাওয়া সুন্দর কিছুর কথা বলতে।
সেটা হলো আমার হাসি। 🙂
অবাক হয়ে ছবিগুলো দেখছিলাম।অনেক মনোযোগ দিয়ে।
২০১৪ থেকে ২০২০।
এমন না যে হাসিগুলো মেকি।
ওই কাজ আমাকে দিয়ে হয় না কখনো।
যেকোন মূহুর্তে যখনই দেখতাম হাসতে পারবো না,তখন ফ্রেম থেকে সরে যেতাম।
এখানের প্রতিটা ছবিই নিজস্ব রূপে স্বকীয়,
প্রতিটি ছবির নিজস্ব কাহিনী আছে।
আমি যেহেতু প্রতিদিনের স্মৃতি ধরে রাখি,সেজন্যে এই প্রত্যেকটা ছবিই ফেসবুকে আছে,দেখেছেন কম বেশি সবাই।
পড়তে চাইলে এই পোস্টে সেই ছোট ছোট কাহিনীগুলো পড়তে পারেন।
১. এই ছবিটা ১৯৮৮ সালের।
আমার সবচেয়ে প্রিয় ছবি।
জন্মের শুরু থেকে যুদ্ধ করা মা মেয়ের ছবি।
২. এই ছবিটা ২০১৪ সালের ৮ আগস্টের।আমার আকদের দিনের।
কি???
ভাবছেন,আনকম্ফোর্টেবল লাগছে না বলতে?
ভাবছেন,এতদিন থেকে ছবিটা রেখে দিলাম কেন?নাহ।
এখন আর আনকম্ফোর্টেবল লাগছে না।
সেই অন্ধকার থেকে মুক্তি পেয়েছি অবশেষে।
৬ বছর আগের এই দিনের বাকি সব ছবি মুছে ফেললেও এই ছবিটা পারিনি।
আমার কাছে অনেক প্রিয় একটা ছবি।
এখানে হাসিটা উচ্ছ্বল ছিলো, ছিলো প্রাণবন্ত।
কবুল বলা,নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখায় বিভোর হওয়া,কাবিননামার সেই নীল কাগজে সাইন করা। 🙂
থাক না একটা lesson হয়ে,খারাপটুকু নাহয় ভুলে গেলাম আজ থেকে।
আমার খুব শখ ছিলো pink bride হওয়ার। Typical red bridal get up এর বাইরে গোলাপি শাড়ি,গোলাপি মেক-আপ।
মানুষের অভিজ্ঞতা যতই তিক্ত হোক,কিন্তু তার মধ্যেও সুন্দর কিছু থেকে যায়। আমার এই হাসি তাই আমার কাছে সবসময় অনেক precious.
সুন্দর একটা স্বপ্ন সত্যি হতে দেখা নববধূর হাসি।
চোখের সামনে সবকিছু পারফেক্ট হতে দেখার আনন্দের হাসি।
৩. গোলাপি শাড়ি পরা ২য় ছবিটা ২০১৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারীর। বান্ধবীর বিয়েতে তোলা। সংসার শুরুর মাস দুয়েক পরের। অসংখ্য চড়াই-উৎরাই, অসংখ্য কটু মন্তব্য,গালি,অসংখ্য সন্দেহের প্রশ্নবাণ এতটুকু মলিন করতে পারেনি সেই হাসিটাকে। সবসময় ভাবতাম,ঠিক হয়ে যাবে সব। মানুষের সামনে,ক্যামেরার সামনে তাই হাস্যোজ্জ্বল একটা চেহারা থাকতো সবসময়।
সবাই জানতো,সুখী আমি। জানানোর প্রয়োজন মনে করিনি কষ্টগুলো।কারণ, আমার মনে হতো আমি একা সবকিছু deal করতে পারবো। একরোখা আমি জেদ ধরে বসেছিলাম এই আশা নিয়ে যে সব সুন্দর হবে আবার।
৪. হলুদ শাড়ি পরা ছবিটা ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল।নববর্ষ উপলক্ষে ডিপার্টমেন্টের অনুষ্ঠান। সাংসারিক অশান্তির ঝড় তখন তুঙ্গে। হাসিটা তবুও মলিন হয়নি এক রত্তি। ঐ যে জেদ। কাউকে বুঝতে দেবো না কিছু। কিচ্ছু বলা যাবেনা কাউকে।নাহলে সংসার কিভাবে টিকবে????
এই দিনের ঠিক ৭ দিন পর বেধড়ক মার খেয়ে বের হয়ে আসা আমি কি সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম হাসিটা কতদিন থাকবে আমার মুখে?
৫. এই ছবিটা আমার নিজের বাসায় ফিরে আসার কয়েকদিন পরের। ওসমানি মেডিকেলে একটা সেমিনারে গিয়ে তোলা। সেদিন আমি আমার সিনিয়র আপুকে আমার কথা বলতে গিয়ে ঝরঝর করে কেঁদেছিলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে এই হাসি ঠিকই চলে এসেছিল মুখে।
৬.পরের কয়েকটি ছবি ডিপ্রেসিভ এপিসোড চলাকালীন সময়ের ছবি। কেউ কি জানতো তখন অনেক আত্মীয়স্বজনরাও আমাকে তাদের আঙ্গিনায় নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন,এমনকি আমার আপন ফুফু-ও?
ভেঙ্গে পড়েছিলাম তখন। আত্মবিশ্বাস মাইনাসের ঘরে।
এক এক দিন নিঃশ্বাস আটকে আসতো। সেই দম বন্ধ করা রাতের দুঃস্বপ্ন। সেই চেপে ধরা অনুভূতি।
ভাবতাম,সেদিনই মনে হয় শেষ দিন আমার। না। তারপরেও বেঁচে থাকলাম। আর তাই হাসিটা কিন্তু ঠিকই রয়ে গিয়েছিল।
৭. ছেঁড়া লিগামেন্ট এর ব্যথা নিয়ে অপারেশনের জন্যে ঢাকা যাওয়া ২০১৮ সালে। ক্যামনে যে দাঁত কেলানি দিলাম,জানিনা।
৮.শেষের দিকের এই ছবিগুলো গত এক-দেড় বছরের। কিছু মানুষের সঙ্গ আর সাহচর্য আমাকে শিখিয়েছে নিজেকে আরো একটু বেশি ভালবাসতে।
তাই এখনও হাসি,প্রাণ খুলে। এমনকি হতাশার মূহুর্তে ভেঙ্গে পড়ে,রুমের মধ্যে কতক্ষণ কাঁদি। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিই।
কিছু প্রিয় মানুষের লম্বা লাভ লেটার পড়ে ঝরঝর করে কেঁদেছি,তারপর সেই মানুষের আশার উপর ভর করে আবার উঠে দাঁড়াই। আবারও খিলখিলিয়ে হেসে উঠি।
ধন্যবাদ Jenny Jenny তোর সেই ভার্চুয়াল চিঠির জন্যে। 😘😘
আল্লাহতা’আলা কাউকে নিরবচ্ছিন্ন সুখ বা দুঃখ দেন না। তিনি যেহেতু পরীক্ষা নিচ্ছেন,উত্তীর্ণ করাটাও উনার হাতে।
ভেঙ্গে পড়ি, কিন্তু আবার জোড়া দেই নিজেকে।
কাঁদি,মনে হয় মরি না কেন!!!
কিন্তু তারপরেই ভাবি,বেঁচে আছি যেহেতু এখনও হয়তো কোন পূণ্য এখনো বাকি আছে,হয়তো কোন কাজ বাকি রয়ে গেছে যার কারণে আল্লাহতা’আলা আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। হয়তো হবে ভালো কিছু।
হাসিটা তখন কান্নাকে মুছে দেয় চোখের কোণ থেকে,জায়গা করে মুখে। সেই হাসি বিস্তৃত হয় চোখ পর্যন্তও।
আর সেজন্যেই আজকের এই লেখা।
নিজেকে নিয়ে অহংকার নয়,বরং এই মানসিক শক্তিটাকে ভালবাসা আর আল্লাহতা’আলার দরবারে শুকরিয়া জানানো ইমোশনালি fragile কিন্তু একই সাথে এতটা মজবুত করে বানানোর জন্যেও। 🙂🙂🙂
আমাকে জটিল একটা কম্বো বানানোর জন্যে, এতটা ছ্যাঁচড়াভাবে নিজেকে ভালবাসতে শেখানোর জন্যে,
সবকিছুর পরেও এই আশায় পথ চলার জন্যে যে যা-ই হোক সবই আল্লাহর হুকুম,
অনেক বাজে মূহুর্তের কথা,কারো অন্যায়টুকু,এমনকি নিজের দূর্বলতা,নিজের ত্রুটিগুলোও অকপটে প্রকাশ করতে পারার সৎ সাহস দেওয়ার জন্যে,
এতকিছুর পরেও বেঁচে থাকার মূহুর্তগুলো বাঁচার জন্যে;
জীবনে সুন্দর মনের কিছু মানুষ উপহার দেওয়ার জন্যে।
সবকিছুর জন্যে আল্লাহতা’আলার দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া। ☺☺
তারিখগুলো আজ থেকে তাই ক্যালেন্ডারকেই উপহার দিয়ে দিলাম।
তাদেরকে স্মৃতি নয়,বরং নেহায়েত তারিখ বানিয়ে রেখে দিলাম।
দুঃস্বপ্ন আসলে আসবে,কয়েক সেকেন্ডের সেই মূহুর্তকে আমার বাকি সময় নষ্ট করতে দেবো না।
আজকের পর থেকে প্রতিটি ৮ আগস্ট,প্রতিটি ২২ ডিসেম্বর,প্রতিটি ১৪ নভেম্বর এই কথারই reminder হবে, “You are here to live each moment for yourself,for those who love you,who cares for you. You are here for those who may need your help. You are not here for those who wanna use as a toy,for pleasure, who wanna oppress you.. You are here for a reason,set by Allah swt. Live,girl.Live…..🥰🥰🥰”
By: Dr Nazmun Naher Khan