২০০৩ সাল, এক শুক্রবার। আমার খালা আমার বাসায়। ঘুম থেকে উঠে দেখি খালা আর আব্বা খাবার ঘরে গল্প করছিলেন। মা রান্নাঘরে। নাশতার চেহারা দেখে এক দৌড়ে গেলাম বাথরুমে। ব্রাশ করলাম। বাথরুম করতে গিয়ে প্যান্ট খুলে দেখি কালচে দাগ। নিজের আন্ডারওয়্যার নিজের ধোয়ার অভ্যাস না থাকায় প্যান্টটা বাথরুমে ফেলে চেঞ্জ করে এলাম। ভাবলাম কোনভাবে দাগ লেগে গেছে। তাই আর তোয়াক্কা করিনি। নাশতা করলাম। করে অস্বস্তি বোধ করি। মনে হচ্ছিল আমি হয়তো প্যান্টে বাথরুম করে ফেলছি। এরপর বাথরুমে গিয়ে চেক করলাম। আবারও একই অবস্থা। তখনও বুঝতে পারলাম না হচ্ছেটা কি। ৩ বারের বার আর সহ্য করতে পারিনি। আব্বার সামনে থেকে আমার খালাকে টেনে নিয়ে গেলাম। তাকে দেখায় বললাম কি এগুলো আমার ভয় লাগছে। খালা বলল ভয় পাইস না। আমি আম্মাকে বলতে না করে দিলাম, যদি বকে? যাই হোক, এক নিমেষে বাসার পরিবেশ উল্টায় গেলো। আমার মা, খালা আর বড় বোন রুমে ঢুকে রুম লক করে দিলো। আমি ভয়ে ওখানেই শেষ। ১০ মিনিট পর আমার খালা আমাকে ডাকলেন। আম্মা রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। খালা আর বড় বোন। দিদি বলল, “তোমার জন্য গিফ্ট আছে।” বলে একটা StayFree ধরায় দিল। বলল আগে এটা পড়ে আসতে।
এরপর বলল ২৮ দিন পরপর এরকম রক্তক্ষরণ হবে ৭ দিনের জন্য। এটা সব মেয়েদের হয়। আমি বলেই ফেললাম, “আমি এতদিন এটাকে ডায়পার ভাবতাম।” সেদিন আর কিছু হলোনা। কিন্তু এত ব্লিডিং এর জন্য বার বার প্যাড চেঞ্জ, জাঙ্গিয়া ধোয়া – আমি কান্না করে দিলাম। রাত ২টায় দেখি প্যাড নড়ে গেছে। আমার আর চেঞ্জ করতে মন চাচ্ছিল না। আমি বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায়, কোনকরম প্যাড ঠিক করলাম। আমার খালা বুঝে ফেলেছিলো। বুঝে সে আমাকে নাপাক বলে বিছানা থেকে নামায় দেয়। আমি এর জন্য তাকে দোষারোপ করিনা, কারণ এটা তাঁর কাছে আড় চোখে দেখার মত ছিল হয়তো। তবে সে সময় মানসিক যে অবস্থা আমার। আমি তাঁর ব্যবহার নিতে পারিনি। আস্তে আস্তে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেই। কারণ স্কুলে গেলেই আমার আম্মার কথা মনে পড়ত। টিফিন খেতাম আর কাঁদতাম। আমার মা আমাকে নিয়ে বিপদে পড়ে গিয়েছিলেন। আমি সকালে রেডি হতাম কিন্তু স্কুলে যেতাম না। সেদিন আমি বুঝলাম আমার বান্ধবীরা শারীরিক শিক্ষা বইয়ের শেষ পাতায় কি লেখা ছিল আমাকে কেন বলত না। প্রায় ২ বছর লাগলো নিজের মানসিক চাপ কমাতে। নিজে নিজেই ঠিক করলাম আর কি। পরিশেষে বুঝলাম ছেলে মেয়েদের মধ্যে পিরিয়ড বা মাসিক নিয়ে একটা প্রাথমিক ধারণা শুরু থেকেই মা বাবার দেয়া উচিৎ যেন তারা শুধু শারীরিক নয় বরং মানসিক ভাবেও নিজেকে প্রস্তুত রাখেন।
আমি WSIF এর মাধ্যমে সবাইকেই আহবান জানাবো যেন ঋতুস্রাবের বিষয়টাকে নিয়ে আপুরা কেউই লজ্জা বা রাখঢাক না করেন নিজের ছেলেমেয়েদের সাথে। এতে ছেলেরা কিশোর বয়স থেকেই মেয়েদের সম্মান করতে শিখবে এবং কিশোরীরা মানসিক বিপর্যস্ততার হাত থেকে রক্ষা পাবেন। আপনাদের প্রথম অভিজ্ঞতাও জানতে চাই। ধন্যবাদ।
