সবাই পেশায় তাকে গৃহিনী বলে। তাতেই সে খুশি। সে সারাদিন ঘরের কাজ, বাচ্চাদের সামলানো সবই করে আবার সকালে এবং সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত স্বামীর ব্যবসায় তার পাশে থেকে সাহায্য করে। সারাদিন কাজ করে stressed হওয়াটা স্বাভাবিক, তারপরও পরিবারের জন্য করছে এই ভেবে নিজের শক্তি যোগাচ্ছে ।
কিন্তু দিনের পর দিন এত কিছু করার পর ও স্বামীর যখন কাছে শুনতে হয় যে, “সারাদিন তো বাসায় থাকো, তুমি আমার পরিশ্রম বুঝবে কি করে ? আরামে শুধু ঘুমাও বাসায়!” তখন মনে অপরিসীম কষ্টে ভাবতে থাকে এত কষ্ট কেন করছে, কাদের জন্য করছে ? এভাবে অজান্তেই কান্না চলে আসে । এভাবেই তার জীবন চালিয়ে যেতে হয় এই আশা নিয়ে যে একদিন তার সন্তান মানুষের মত মানুষ হবে এবং সেদিন থেকে তার এই কষ্ট গুলো থাকবেনা।
‘গৃহিণী’ শব্দটা কেন যেন এখন মহিলাদের হেয় করার জন্যই ব্যবহার করে অনেকে। এখনও মানুষের বোঝার বাকি যে পেশার মধ্যে গৃহিণী সবচেয়ে মূল্যবান, পরিশ্রম এবং ভালবাসার।
অপরদিকে তারই ছেলেমেয়েরা এই ঘটনা গুলো খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে এদের মাঝে সৃষ্টি হয় “familial stress” । ছেলেমেয়েরা তাদের জীবন এবং পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও সমস্যাগুলো অন্যের সাথে তুলনা দিয়ে থাকে। এমন অনেকের সাথে কথা হয়েছে ভার্সিটিতে যারা পরিবারের সমস্যা নিয়ে খুব চিন্তায় থাকে, তাদের খাওয়া-দাওয়া এবং ঘুম এই সমস্যায় প্রভাবিত হয় ।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলি, আমার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু, তার সাথে যখন প্রথম পরিচয় হয় তখন বুঝতে পারছিলাম তার পরিবেশের সাথে খাপ-খাওয়াতে কষ্ট হচ্ছে, সবার সাথে মেলামেশা করতে পারছে না। সে নিজের সব থাকার পরও অন্যরা কেন ওর সাথে মিশেনা এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতো ।
দিনের পর দিন এই সমস্যা বেড়েই চলছিল। একদিন জিজ্ঞেস করেই বসলাম “সবার সাথে এত রেগে কথা বলিস কেন আর এত স্ট্রেস কেন নেস সবসময়?” সে উত্তরে বলে “ আমার ঘরে শান্তি নেই, আমি এখানে কিভাবে ভাল থাকি! ছোটবেলা থেকে দেখে আসতেছি আম্মুর এত কাজ করার পরেও আব্বু কিভাবে আম্মুকে কথা শুনাতো। এখন তো আব্বুকে সহ্যই হয় নয়, কথা বলতেও ইচ্ছা করেনা। মন চায় পরিবারের সাথে কোনো কানেকশনই না রাখি।”
সময়ের সাথে সেও এসব স্ট্রেস থেকে দূরে থাকার উপায় হিসেবে পড়াশুনা আর টিউশনি তে ব্যস্ত থাকাকে বেছে নিলো, মাঝে মাঝে বেশী কষ্টে সে কান্না করতো।
মা-বাবা কখনও চায়না তাদের সন্তান তাদের কারনে চিন্তিত থাকুক কিন্তু তাদের অজান্তেই হয়ত তাদের আদরের সন্তানগুলো অনেক কষ্টে থাকে এবং হয়ত একে অপরকেও কষ্ট দিয়ে থাকেন।
সবার জীবনের পরিস্থিতিগুলো এক হবেনা সেটাই স্বাভাবিক কিন্তু এরই মাঝে নিজেদের ভাললাগার জিনিস গুলো খুজে বের করতে হবে যাতে স্ট্রেস এর সময় নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারি। যখন আমি পারব সেই পথটি অতিক্রম করে আসতে তখন আমি অন্যকারো সেরকম পরিস্থিতি মোকাবেলায় কিছুটা হলেও পাশে থাকতে পারব।
সবাই নিজ নিজ জীবনের স্ট্রেসকালীন সময়গুলো স্বাচ্ছন্দ্যে অতিক্রম করতে পারুন সেই কামনা রইল
At last, in sorrows and happiness we will be always there for each-other to learn and to live in peace
Written by Liza